কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার ৬ বছরেও শুরু হয়নি। কবে মামলার বিচার শুরু হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা আশা করছেন, দ্রুত মামলার বিচার শুরু হবে।
২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে ৯ জঙ্গি মারা যায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। মামলাটি অধিকতর চার্জ শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।
২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটির চার্জ শুনানি শেষে ২৩ মার্চ আদেশের জন্য রাখেন আদালত। এরপর বিভিন্ন কারণে আর চার্জ শুনানি হয়নি। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই মামলাটি চার্জ শুনানির জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন এক আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এজন্য আদালত আগামী ১২ সেপ্টেম্বর চার্জ শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, মামলাটির তদন্তে প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছে। ২০১৯ সালের মে মাসে মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলায় কোনো আসামি পলাতক থাকলে কিছু প্রক্রিয়া থাকে। এ মামলায়ও এক আসামি পলাতক রয়েছে। এজন্য বিচার শুরু করতে একটু সময় লেগে যায়। ওই প্রক্রিয়া শেষ করে আমরা চার্জ শুনানি শুরু করি। কিন্তু ২০২০ সালে ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের কারণে অনেকটা সময় আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এজন্য কার্যক্রম তেমন আগায়নি।
তিনি বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলা, ব্লগার অভিজিৎ, প্রকাশক দীপন হত্যা, জুলহাজ-তনয় এসব আলোচিত মামলার বিচার শেষ করেছি। কিছু কারণে মামলাটার বিচার এখনও শুরু হয়নি। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর মামলাটি চার্জ শুনানির জন্য আছে। আশা করছি, ওইদিন মামলার চার্জ গঠন হয়ে যাবে। এ মামলায় চার্জ গঠন হয়ে গেলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের হাজির করে মামলাটির বিচার শেষ করার চেষ্টা করবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আসামিপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, একটা মামলার চার্জ শুনানি ২ বছরেও শেষ হয়নি। আসামিদের তো নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে তাদের অর্থ, সময় দুটোই নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া, মামলায় কিছু গ্যাপ আছে। শুনানিতে আমরা তা তুলে ধরবো। এরপর যদি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়ে যায় তাহলে ট্রায়ালে গিয়ে আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ‘জাহাজ বিল্ডিং’ এর পঞ্চম তলায় ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই ভোরে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ৯ জন মারা যান। হাসান নামে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে পুলিশ। পালিয়ে যায় একজন। তারা সবাই জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর সদস্য।
ওই ঘটনায় ২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০১৯ সালের ৯ মে মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই আদালত ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুযারি মামলাটির চার্জ শুনানি শেষে ২৩ মার্চ আদেশের জন্য রাখেন আদালত। এরপর তা পিছিয়ে ২৩ এপ্রিল ধার্য করেন আদালত। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোধে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
মামলার আসামিরা হলেন- রাকিকুল হাসান রিগ্যান (২১), সালাহ্ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে কুলমেন (৩৩) ও হাদিসুর রহমান সাগর (৪০)। আসামিদের মধ্যে আজাদুল কবিরাজ পলাতক রয়েছেন। আব্দুর রউফ ও আবুল কাশেম জামিনে আছেন। অপর সাত আসামি কারাগারে আছেন।